Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

ছবি
শিরোনাম
জুম চাষ
বিস্তারিত

জুমচাষ (Shifting cultivation) পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতি গোষ্ঠীদের মধ্যে অতি পরিচিত একটি পাহাড়ী মিশ্র কৃষি চাষ পদ্ধতি। এমন একটা সময় ছিল যখন এখানকার জনগোষ্ঠীদের মধ্যে এই জুম চাষই ছিল জীবিকা অর্জনের একমাত্র উপায়। ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে এখানকার মানুষ সমতলের মত চাষাবাদ করার পদ্ধতি আয়ত্ব করেছে জুমচাষের অনেক পরে। এটি একটি ঐতিহ্যবাহী বংশ পরম্পরায় জীবিকার মাধ্যম। বর্তমান আধুনিক বিশ্বের গ্লোবালাইজেশনের (Globalization) কারণে অনেক পরিবর্তনের ছোয়া লাগলেও এখানকার অনেক মানুষের কাছে জুমচাষ এখনো জীবন ও জীবিকার অন্যতম উপায় হিসেবে ঠিকে রয়েছে। সাধারণত জুমচাষের জন্য প্রথমে জমি নির্বাচন করা হয়। এক সময় গ্রামের লোকজন মিলে কে কোন জায়গায় জুমচাষ করবে, পাহাড়ের কোন জায়গায় ধান ও সাথী ফসল বেশী হবে এবং আগাছা ও রোগবালাই কম হবে আলাপ আলোচনা করে জুম নির্বাচনের জন্য এক পাহাড় থেকে অন্যান্য পাহাড়ে যেত। নির্বাচিত জায়গায় তারা একটা চিহ্ন(মাছ্যা) দিত যে এই জায়গায় বা পাহাড়ে জুমচাষ করা হবে। এভাবে জুম নির্বাচন করার পর ফাগুন-চৈত্র মাসের দিকে জুম কাটা বা জঙ্গল কেটে পরিস্কার করা হয়।চৈত্র মাসের শেষদিকে আগুন দেয়ার পর আধ-পোড়া কাঠখন্ড পরিষ্কার(আ-কাছা) হলে বৈশাখের প্রথম বৃষ্টিতে ছাই মিশে গেলে সেখানে ধান, মরিচ, তিল, মারফা, তুলা, কুমড়া নানা রকম পাহাড়ী আলু, ভূট্টা, বেগুন ও হরেক প্রকার শাকসবজির বীজ মাটিতে বুনা হয়। এভাবে রোপনকৃত বীজ থেকে ফসল বেড়ে উঠার জন্য সময়মত আগাছা পরিস্কারসহ যা-যা করা দরকার তা করা হয়।

 

এক সময় জুমের ফসল বেড়ে উঠলে পাহাড়ী জুমিয়ার মন আনন্দে ভরে উঠে। সাধারনত মারফা, ভূট্টা, বেগুন, আলু, মরিচ, সিনালসহ কিছু ফসল তাড়াতাড়ি হয়। জুমিয়ারা সেগুলো বিক্রির জন্য বাজারে তুলে আনে। এরপর ভাদ্র-আশ্বিন মাসের দিকে ধান পাকা শুরু হলে তখন জুমিয়াদের মন উৎফুল্লহয়ে উঠে। ঘরে ঘরে তখন উৎসব শুরু হয়। তবে সবচেয়ে বড় উৎসব হয় নতুন ধান ঘরে তোলার সময়(ধানাত) এবং নতুন ধানের ভাত(নয়া ভাত) খাওয়ার সময়। এই নবান্ন উসবের সময় যার যার সংস্কৃতির মত আমিষের সমন্বয়ে রান্নার আয়োজন করে এবং বাড়ীতে সাধ্যমত প্রতিবেশী ও আত্মীয় স্বজনদের দাওয়াত করে। চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা সমাজে দেখা যায় তারা গেঙ্গুলী নামক ঐতিহ্যবাহী গায়ক দিয়ে সারারাত জেগে নিজস্ব সংস্কৃতির নানা কাহিনীর সমন্বয়ে গান শুনত। পাহাড়ে এটা গেঙ্গুলী গীত নামে পরিচিত।

 

এভাবে ধান তোলার পরও জুমে কিছু ফসল যেমন-তুলা, তিল, মরিচসহ অন্যান্য ফসল থেকে যেত। এগুলো সময় উপযোগী পরিপক্ষ হলে জুমচাষীরা তা বাজারে বিক্রি করতে আনে। এভাবে জুমের ফসল আহরণ করে জুমচাষ এক বছরেরও কম সময়ে শেষ হয়ে যায় এবং সেগুলো খেয়েপড়ে সাধারণ জুমিয়ারা পরবর্তী বছরে আরো ভালো ফসলের আশায় জুমচাষের স্বপ্ন রচনা করে।

 

এরকম বছরের পর বছর ধরে জুমচাষ পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীদের মধ্যে ঐতিহ্যবাহী পন্থায় বংশ পরম্পরায় চলে আসছে। বলা যায় জুমচাষ এখানকার পাহাড়ী মানুষের জীবনের সাথে মিশে আছে।